পর্নোগ্রাফি আসক্তি



পর্নোগ্রাফি আসক্তি (ইংরেজি: Pornography addiction, Porn addiction বা Internet pornography addiction নামেও পরিচিত) হলো আসক্তির একটি প্রস্তাবিত মনোবৈজ্ঞানিক মডেল, যার সাহায্যে নেতিবাচক শারীরিক, মানসিক, সামাজিক অথবা আর্থিক পরিণতি ঘটা সত্ত্বেও, কোনো ব্যক্তির পর্নোগ্রাফি সংশ্লিষ্ট ভোগ্যপণ্যের ব্যবহার দ্বারা তাড়িত অমোঘ যৌন ক্রিয়াকলাপকে ব্যাখ্যা করা হয়। ইঙ্গিতনির্ভর প্রতিক্রিয়া পরীক্ষার মাধ্যমে সাইবারসেক্সের পারিতোষণ ও ক্রমশ আকর্ষণ শক্তিশালীকরণমূলক (যেমনঃ নেশা সৃষ্টি) বৈশিষ্টের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সমস্যাপ্রবণ ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফি দেখা বলতে বোঝায় এমন কোন উপায়ে পর্নোগ্রাফি দেখা যেটি একজন ব্যক্তির জন্য ব্যক্তিগত বা সামাজিক দিক থেকে ক্ষতিকর এবং সমাজের অন্যান্য সদস্যদের সাথে মিথস্ক্রিয়ার জন্য বরাদ্দকৃত মূল্যবান সময় সেটি দেখার পেছনে ব্যয়িত হয়। আসক্ত ব্যক্তিরা হয়ত বিষণ্নতা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, চাকরি হারানো, বেকারত্ব অথবা তাদের সামাজিক জীবনের উপর পর্নোগ্রাফির কুপ্রভাবের কারণে আর্থিক সংকটসহ নানাবিধ অসুবিধায় ভুগতে পারেন।

উপসর্গ ও রোগনির্ণয়

পর্নোগ্রাফি আসক্তি বা সমস্যাপ্রবণ পর্নোগ্রাফি দেখাকে রোগ হিসেবে শনাক্তকরণের জন্য কোন সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত রোগ নির্ণয়ের মানদন্ড নেই। ২০১৩ সালে প্রকাশিতDiagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders এর পঞ্চম সংস্করণে (DSM-5 এ) আচরণিক আসক্তি হিসেবে শুধুমাত্র সমস্যাপ্রবণ জুয়া খেলা নির্ণয়ের মানদন্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি অনেকটা মাদকাসক্তি নির্ণয়ের মানদন্ডের ধারাসমূহ যেমন, নির্দিষ্ট আচরণ সম্পর্কে সার্বক্ষণিক চিন্তাবিষ্টতা, আচরণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কমে যাওয়া, মাদক সহনশীলতা, মাদক নির্ভরশীলতা, মাদক প্রত্যাহার উপসর্গ এবং প্রতিকূল মনোসামাজিক পরিণতি প্রভৃতির অনুরূপ।তবে অন্যান্য আচরণিক আসক্তি নির্ণয়ের জন্য রোগ নির্ণয়ের মানদন্ড নির্ধারণ করা হয়েছে, যেগুলো মূলত মাদকাসক্তি নির্ণয়ের প্রচলিত মানদন্ডের উপর প্রতিষ্ঠিত।

রোগ হিসেবে আইনগত মর্যাদা

পর্নোগ্রাফি দেখাকে মানসিক রোগ হিসেবে নির্ণয়ের যথার্থতার বিষয়কে ঘিরে তুমুল তর্কবিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

চিকিৎসা

অনলাইন সুরক্ষা

কিছু চিকিৎসক এবং সংস্থা ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফি ব্যবহার নিয়ন্ত্রনের জন্য ইন্টারনেট কন্টেন্ট-কন্ট্রোল সফ্টওয়্যার ও ইন্টারনেট নজরদারী ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

নোফ্যাপ (NoFap)

নোফ্যাপ (ইংরেজি: NoFap) হলো ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি অনলাইন কম্যুনিটি,যারা পর্নোগ্রাফি দেখা, হস্তমৈথুন করা কিংবা যৌনমিলন পরিহার করতে চান তাদের জন্য এটি একটি সাপোর্ট গ্রুপ হিসেবে কাজ করে।

গবেষণা

রোগের পরিব্যপ্তি

অধিকাংশ সাফল্যজনক গবেষণাতেই সুবিধাজনক নমুনা জনগোষ্ঠী ব্যবহার করা হয়। এমনি একটি গবেষণায় ৯২৬৫ জনের একটি সুবিধাজনক নমুনা জনগোষ্ঠী ব্যবহার করে জানা যায় যে এদের ১% ইন্টারনেট ব্যবহারকারী স্পষ্টতই সাইবারসেক্সে আসক্ত এবং ১৭% ব্যবহারকারীই সমস্যাপ্রবণ যৌন আসক্তি নির্ণয়ের মানদন্ডে উত্তীর্ণ হন। অর্থাত্ তারাক্যালিচম্যান যৌন আসক্তি স্কেলে গড় মানের প্রমাণ বিচ্যুতির চেয়ে এক পয়েন্ট বেশি স্কোর করেন। ৮৪ জন কলেজপড়ুয়া পুরুষের উপর করা একটি জরিপে দেখা যায় যে যারা পর্নোগ্রাফি ব্যবহার করেন তাদের ২০-৬০% লোকই এটিকে সমস্যাপ্রবণ মনে করেন। ইন্টারনেট আসক্তির উপর করা একটি গবেষণা নির্দেশ করে যে এই আসক্তির হার হয়ত ইউরোপীয় ও আমেরিকান জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১.৫ থেকে ৮.২% শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করতে পারে। ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফি ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অন্তর্ভুক্ত এবং দেখা গেছে ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফি ব্যবহারই একমাত্র কার্যকলাপ যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যবহারকারীকে অমোঘ আচরণের দিকে ধাবিত করে।

তথ্যসূত্র


মন্তব্যসমূহ

  1. এই মন্তব্যটি একটি ব্লগ প্রশাসক দ্বারা মুছে ফেলা হয়েছে।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন